বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৪০ অপরাহ্ন
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) স্বপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে করোনাভাইরাস পরীক্ষায় কী ধরনের পরীক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে কী ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা আগামী সোমবারের মধ্যে তা জানাতে নির্দেশ দেওয়া হলো।
এদিকে, নতুন করে ভারত ও ইন্দোনেশিয়ায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এতে জানানো হয়েছে, এই অঞ্চলের ১১টি দেশের মধ্যে পাঁচটি দেশে এরই মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষ মিলেছে। অন্য তিনটি দেশ হলো নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড। বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের বাকি দেশগুলো এখনো করোনাভাইরাসমুক্ত রয়েছে। তবে এ দেশগুলোকে এ ব্যাপারে আরো সতর্ক থাকতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক ড. পুনম ক্ষেত্রপল গতকাল বুধবার বিকেলে এই দেশগুলোর স্বাস্থ্য খাতের সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছেন।
ভয়াবহ এই ভাইরাসে বুধবার পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ৩২৮৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া প্রায় ৮০টি দেশের ৯৫৪৮১ জন এতে আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৫৩৬৮৮ জন।
বিদেশ ভ্রমণকারী তিনজনকে দেশে সরকারের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১১ জনকে আইসোলেশনে নেওয়া হলেও নমুনা পরীক্ষায় রিপোর্ট নেগেটিভ আসায় তাদের ছেড়ে দেওয়া। এ ছাড়া গতকাল বিকেল পর্যন্ত দেশে মোট সন্দেহজনক উপসর্গ থাকা ১০৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। কারো মধ্যেই এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি। তিনজনের ফলাফল প্রক্রিয়াধীন বলে কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন সরকারের করোনাভাইরাস বিষয়ক মুখপাত্র এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ড. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক ড. পুনম ক্ষেত্রপল বিবৃতিতে জানিয়েছেন, নতুন করোনাভাইরাস যেহেতু বিশ্বব্যাপী উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে, তাই এটি নিয়ে সবারই সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে এই ভাইরাস প্রতিরোধ, শনাক্তকরণ ও ব্যবস্থাপনায় কোনো ধরনের অসতর্কতা থাকলে তা ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি আরো বেড়ে যায়। এ জন্য জনসচেতনতা সবচেয়ে বড় একটি পদক্ষেপ।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশে উচ্চ পর্যায়ের তিনটি শক্তিশালী কমিটি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল বিকেলে রাজধানীর মহাখালীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘নতুন করোনাভাইরাস বর্তমানে বিশ্বের ৭০টিরও বেশি দেশে প্রবেশ করেছে। আমাদের দেশেও এই ভাইরাসটি চলে আসতে পারে। যদি ভাইরাসটি চলে আসে তার প্রতিকারে স্বাস্থ্য খাতের সব ধরনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।’ তিনি জানান, দেশের সব বন্দরে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
ডাক্তার-নার্সদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রস্তুত রাখা এবং সার্বক্ষণিক হটলাইন খোলা রাখার ব্যাবস্থার পাশাপাশি দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও আন্ত মন্ত্রণালয়ভিত্তিক তিন স্তরের শক্তিশালী কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক ও আন্ত মন্ত্রণালয়ের ক্ষেত্রে তাঁর (স্বাস্থ্যমন্ত্রী) নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদসচিব, মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্রসচিবসহ এডিবি, বিশ্বব্যাংক, ইউনিসেফ ও ইউএসএআইডিসহ ৩১ সদস্যের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং দেশে কোনো কারণে করোনাভাইরাস চলে এলেও তা আশঙ্কার কারণ হতে পারবে না।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে গতকাল জানানো হয়েছে, দেশের বাইরে থেকে আসা মোট চার লাখ ৪৩ হাজার ৯২ জনকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন বন্দরে ১৪ হাজার ৭১৩ জনকে স্ক্রিনিং করা হয়। অন্যদিকে দেশের বাইরে ইতালিতে একজন বাংলাদেশি নাগরিকের শরীরের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া আরব আমিরাত ও সিঙ্গাপুরে তিনজন বাংলাদেশি নাগরিক এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আছে। চীনফেরত ২৩ জন বাংলাদেশি নাগরিক কোয়ারান্টাইনে আছেন দিল্লিতে। এখন পর্যন্ত আর কোথাও বাংলাদেশি কোনো নাগরিক করোনাভাইরাস আক্রান্ত হননি। সিঙ্গাপুরে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে আরো চারজন নিজ নিজ কর্মস্থলে আবাসিক ব্যবস্থাপনায় রয়েছে।